হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষা বোর্ড
পরিচিতি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর চতুর্থ দফা কর্মসূচী তাজদীদে মিল্লাত বা সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তন্মধ্যে প্রথমটি হ’ল ‘শিক্ষা সংস্কার’। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগের অধীনে ১৯৯৮ সালে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয়ভাবে ‘আহলেহাদীছ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড’ গঠন করা হয় এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া তৈরী করা হয়। একই সালের ২৪ শে নভেম্বর (মঙ্গলবার) বাদ মাগরিব শিক্ষা বোর্ডের প্রথম বৈঠক দারুল ইমারত, নওদাপাড়া রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে দেশের কয়েকটি মাদ্রাসা অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ হওয়ার পর বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কওমী মাদ্রাসা সমূহকে স্বীকৃতি দানের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং দেওবন্দী তরীকার ছয়টি কওমী বোর্ডের সমন্বয়ে বেফাকুল মাদারিসকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এমতাবস্থায় দেশের আহলেহাদীছ মাদ্রাসাগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য একটি শিক্ষা বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়। এই প্রেক্ষিতে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব পুনরায় উক্ত বোর্ড সচল করা ও পরিচালনার জন্য দায়িত্বশীলদের নিয়োগ দেন এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। সে মোতাবেক ২০১৯ সালের ১০ই জানুয়ারী, ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’ পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে, যা স্বল্প সময়েই সারা দেশে যথেষ্ট সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে, ফালিল্লাহিল হামদ। ইতিমধ্যে বোর্ডের অধীনে নিজস্ব সিলেবাস, পাঠ্যতালিকা ও বার্ষিক পাঠপরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক শিশু শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণ সেট পাঠ্যবই প্রকাশিত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ক্লাস ডায়েরী, হিফয ডায়েরী, হাতের লেখা সহায়িকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ প্রকাশিত হয়েছে। বোর্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
১. পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিস্তার ঘটানো এবং এর মাধ্যমে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষায় সুশিক্ষিত দেশ ও জাতি গঠন করা। সর্বোপরি জ্ঞান বিস্তারের শারঈ নির্দেশ পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। ২. শিরক-বিদ‘আত এবং যাবতীয় কুসংস্কার ও বাতিল আক্বীদা-আমল থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করা এবং সালাফে ছালেহীনের মানহাজ অনুযায়ী ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ময়দানে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য উপযুক্ত কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা। ৩. শিক্ষার্থীদেরকে মেধাবী ও ইখলাছপূর্ণ যোগ্য আলেম ও দাঈ ইলাল্লাহ তৈরী করা এবং যুগোপযোগী মানবসম্পদে পরিণত করা। ৪. একমুখী শিক্ষাধারা প্রবর্তনের লক্ষ্যে আরবী ও ইসলামী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত একই সিলেবাসে পাঠদান অতঃপর মেধা ও আগ্রহের ভিত্তিতে মানবিক, বিজ্ঞান, কারিগরী প্রভৃতি শাখায় পৃথক পাঠ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা। ৫. শিক্ষার সকল স্তরে শুদ্ধভাবে কুরআন পঠন ও অনুধাবনের ব্যবস্থা চালু করা এবং এর সাথে বাংলা, ইংরেজী, আরবী, উর্দূ ভাষাসহ শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটানো।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন। মুহাদ্দিছীন ও সালাফে ছালেহীনের মাসলাক অনুসরণে যুগোপযোগী সিলেবাস, কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন। বোর্ডের অধীনে সমমনা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুমোদন ও মেয়াদ বৃদ্ধি বা নবায়ন। অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়মিত পরিদর্শন এবং শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ। অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের অডিট, বার্ষিক আয়-ব্যয় হিসাব পর্যবেক্ষণ, বাজেট প্রস্তুতকরণ ও বাস্তবায়ন। পরিচালনা কমিটি, এডহক কমিটি অনুমোদন এবং কমিটি সংক্রান্ত উদ্ভূত জটিলতা নিরসন। আপীল এ্যাণ্ড আরবিট্রেশন (বিচারের আবেদন ও সালিশ)। শিক্ষক/শিক্ষিকা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয়ভাবে টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বুনিয়াদী দ্বীন শিক্ষা, কুরআন শিক্ষা ও আরবী ভাষা শিক্ষা কোর্স সহ সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা। শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষক কল্যাণ ফাণ্ড পরিচালনা। অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক নিয়োগ। অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষাগ্রহণ। যোগ্য আলেম ও গবেষক তৈরীর জন্য উচ্চতর কোর্স (তাখাছছুছ) চালু করা। ইসলামী অর্থনীতি ও রাজনীতি বিষয়ক উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা এবং সেমিনারের আয়োজন করা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা সমূহের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা। নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে পৃথক মহিলা মাদ্রাসা, ইসলামী স্কুল/কলেজ স্থাপন এবং নারীদের পৃথক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণে সহায়তা। মেধাবৃত্তি প্রদান এবং গরীব ও দুস্থদের শিক্ষা সহায়তা প্রদান। দক্ষতা ভিত্তিক (স্কীল বেইজড) কারিগরী ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন। এলাকাভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ধারার প্রসার ঘটানো। শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা এবং গবেষণাগার ও লাইব্রেরী উন্নয়নে সহায়তা। অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা।
উপমহাদেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের বিকাশ হয়েছিল মূলতঃ দু’টি ধারায়- ১. জিহাদ আন্দোলন- যা ১৮১৬ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত প্রায় ১২৫ বছর ধরে পরিচালিত হয়েছিল সাইয়েদ আহমাদ শহীদ ও শাহ ইসমাঈল শহীদ এবং পরবর্তীতে মাওলানা বেলায়েত আলী ও এনায়েত আলীর নেতৃত্বে। ২. শিক্ষা আন্দোলন- যা ১৮৩১ থেকে ১৯০২ পর্যন্ত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ব্যাপী পরিচালিত হয়েছিল সাইয়েদ নাযীর হোসাইন দেহলভী ও নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালীর নেতৃত্বে। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ বিগত ৪৩ বছর যাবৎ এদেশে তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় একটি সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনার লক্ষ্যে ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। একটি বেসরকারী ও সমন্বয়কারী শিক্ষা বোর্ড হিসাবে আমাদের সাধ্য সীমিত হ’লেও স্বপ্ন অনেক বড়। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর রহমতে এই শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন একদিন পূর্ণাঙ্গ সমাজ সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং দেশে বা বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষানুরাগী সচেতন মহলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষা বোর্ডে’র কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা করুন এবং আগামী প্রজন্মকে যথাযথভাবে সুশিক্ষিত করার সংগ্রামকে সফল করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! ►‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন শিক্ষা বোর্ডে’র বহুমুখী কার্যক্রমকে সুগম করতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করুন এবং পরকালীন পাথেয় সঞ্চয় করুন। একাউন্ট নং : ০০৭১২২০০০০৭৫৩, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, রাজশাহী শাখা। বিকাশ ও রকেট : ০১৭৫৩-৯৭৬৭৮৭ (+৯ রকেট) | ||