শিক্ষক-ছাত্র ও অভিভাবক মিলেই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের ইমারত কথা বলে না। কথা বলেন শিক্ষক। অতএব যোগ্য শিক্ষক ব্যতীত যোগ্য শিক্ষার্থী গড়ে উঠতে পারে না। নরম মাটি যেভাবে কারিগরের হাতে সুন্দর হাড়ি-পাতিলে পরিণত হয়, নরম শিশুগুলি তেমনি সুন্দর ও চরিত্রবান শিক্ষকের হাতে সুন্দর মানুষে পরিণত হয়। তাই যেখানে শিক্ষক সুন্দর, সেখানে শিক্ষার্থীরা সুন্দর রূপে গড়ে ওঠে ও সমাজে প্রশংসিত হয়। সাথে সাথে সেই প্রতিষ্ঠান সুনাম করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থী গড়েন ও নেতারা জাতি গড়েন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর শিক্ষক। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলের পরিচয় দিয়ে বলেন,هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ- ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি নিরক্ষরদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করেন ও তাদেরকে পবিত্র করেন। আর তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিল’ (জুম‘আহ ৬২/২)।
তিনি বলেন,وَأَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ، وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا- ‘আর আল্লাহ তোমার উপর কুরআন ও সুন্নাহ অবতীর্ণ করেছেন এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। বস্ত্ততঃ তোমার উপর আল্লাহর অসীম করুণা রয়েছে’ (নিসা ৪/১১৩)। এতে বুঝা যায় যে, মানুষ মূলতঃ তার দ্বীন ও ভবিষ্যৎ ভাল-মন্দ সম্পর্কে অজ্ঞ। কেবল কুরআন ও সুন্নাহ তাকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়।
৬ষ্ঠ নববী বর্ষের শেষে মক্কার নেতারা যখন বহুমূল্য উপঢৌকন সহ ‘আমর ইবনুল ‘আছ ও আব্দুল্লাহ ইবনু আবী রাবী‘আহকে বাদশাহ নাজাশীর নিকটে দূত হিসাবে প্রেরণ করেন এবং সেখানে আশ্রয় গ্রহণকারী মুসলিমদের মক্কায় ফিরিয়ে আনার জন্য বাদশাহর নিকট আবেদন করেন, তখন বাদশাহ মুসলমানদের কথা শোনার জন্য তাদের একজন প্রতিনিধিকে আহবান করেন। তখন তারা নিজেরা একত্রিত হয়ে আপোষে বলেন,نَقُولُ وَاللهِ مَا عَلَّمَنَا وَمَا أَمَرَنَا بِهِ نَبِيُّنَا - صلى الله عليه وسلم- كَائِنٌ فِى ذَالِكَ مَا هُوَ كَائِنٌ- ‘আল্লাহর কসম! আমরা সেটাই বলব, যেটা আমাদের রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে শিখিয়েছেন এবং আমাদেরকে আদেশ করেছেন। তাতে আমাদের ভাগ্যে ভাল-মন্দ যা-ই ঘটুক না কেন? অতঃপর ভরা মজলিসে তাদের পক্ষ হ’তে জা‘ফর বিন আবু ত্বালেব (রাঃ) বাদশাহকে বলেন, হে বাদশাহ! আমাদের ধর্মের নাম ‘ইসলাম’। আমরা স্রেফ আল্লাহর ইবাদত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না। বাদশাহ বললেন, কে তোমাদের এসব কথা শিখিয়েছেন? জা‘ফর বললেন, আমাদের মধ্যেরই একজন ব্যক্তি। ইতিপূর্বে আমরা মূর্তিপূজা ও অশ্লীলতা এবং অন্যায়-অত্যাচারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলাম। আমরা শক্তিশালীরা দুর্বলদের শোষণ করতাম। এমতাবস্থায় আল্লাহ মেহেরবানী করে আমাদের মধ্যে তাঁর শেষনবীকে প্রেরণ করেছেন। যার নাম ‘মুহাম্মাদ’। তিনি আমাদের সামনে বড় হয়েছেন। তাঁর বংশ মর্যাদা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারী, সংযমশীলতা, পরোপকারিতা প্রভৃতি গুণাবলী আমরা জানি। নবুঅত লাভের পর তিনি আমাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে সর্বাবস্থায় এক আল্লাহর ইবাদত করার আহবান জানিয়েছেন। সাথে সাথে যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম হ’তে তওবা করে সৎকর্মশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং এক আল্লাহর ইবাদত করছি ও হালাল-হারাম মেনে চলছি। এতে আমাদের কওমের নেতারা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন এবং আমাদের উপর প্রচন্ড নির্যাতন চালিয়েছেন...।[1] এতে বুঝা যায় যে, শিক্ষক সর্বদা শিক্ষার্থীকে বিশ্বাস ও কর্মে সর্বাঙ্গ সুন্দর রূপে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকবেন। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে বর্ণিত হ’ল।-
শিক্ষকের কর্তব্য
(১) শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার প্রতি আগ্রহী থাকা :
যার মধ্যে শিক্ষকতার মেযাজ নেই ও ছাত্রকে সুন্দর রূপে গড়ে তোলার আগ্রহ নেই, সে ব্যক্তি কখনোই শিক্ষক হ’তে পারে না। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলের গুণ বর্ণনা করে বলেন,لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল, যার নিকট তোমাদের দুঃখ-কষ্ট বড়ই দুঃসহ। তিনি তোমাদের কল্যাণের আকাঙ্খী। তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়াবান’ (তওবা ৯/১২৮)। অতএব শিক্ষক সর্বদা শিক্ষার্থীর প্রতিটি কথা ও কাজের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন এবং সর্বদা শিক্ষার্থীর প্রতি স্নেহশীল থাকবেন।
(২) শিক্ষক সালাম দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করবেন :
শিক্ষক ক্লাসে সালাম দিয়ে প্রবেশ করবেন। প্রয়োজনে ৩ বার সালাম দিবেন। কেননা রাসূল (ছাঃ) কখনো কখনো এরূপ করতেন (বুখারী হা/৯৫)। সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সালামের জবাব নিবেন। অতঃপর সবার সাথে তিনি কুশল বিনিময় করবেন ও ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ক্লাস শুরু করবেন। শিক্ষক বা মেহমান আসার অপেক্ষায় আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা জায়েয নয় (ছহীহাহ হা/৩৫৭)। শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশকালে ও উঠে যাওয়ার সময় সালাম দিবেন।[2]
একইভাবে মজলিসে কথা বলার পূর্বে সালাম দিবে’।[3] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে শুরু করে না, তাকে অনুমতি দিয়ো না’।[4] এতে বুঝা যায় যে, সভাপতি ব্যতীত সভা হয় না এবং তার অনুমতি ব্যতীত সভায় বক্তব্য রাখা বৈধ নয়। একইভাবে শিক্ষক ব্যতীত শিক্ষা হয় না এবং শিক্ষকের অনুমতি ব্যতীত শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে বক্তব্য রাখতে পারে না।
(৩) তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত বুঝানো :
শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের নিকট সর্বাগ্রে শিক্ষার লক্ষ্য হিসাবে তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত বুঝাবেন। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা (ফাতেহা ১/১)। তিনি অহি-র বিধান সমূহ প্রেরণ করেছেন তাঁর সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর মাধ্যমে (সাবা ৩৪/২৮; নজম ৫৩/৩-৪)। আর মৃত্যুর পর আমাদেরকে অবশ্যই আখেরাতে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে (যুখরুফ ৪৩/৪৪)। অতএব বিচক্ষণ সেই ব্যক্তি, যে মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণ করে ও আখেরাতের জন্য সর্বাধিক পাথেয় সঞ্চয় করে’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯)।
(৪) শিক্ষক যথার্থ ও সারগর্ভ কথা বলবেন :
শিক্ষক সর্বদা সত্য ও সঠিক কথা বলবেন। কোনরূপ অসত্য ও অনর্থক কথা বলবেন না। কারণ শিক্ষকের প্রতিটি কথাই শিক্ষার্থী সত্য বলে বিশ্বাস করে। সেগুলি তার মনে দাগ কাটে ও সে তার অনুসরণ করে। অতএব যেকোন মূল্যে শিক্ষক সর্বদা সত্য ও সারগর্ভ কথা বলবেন। আর চূড়ান্ত সত্যের উৎস হ’ল কুরআন ও সুন্নাহ। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ فَمَنْ شَآءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَآءَ فَلْيَكْفُرْ، إِنَّآ أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا، ‘তুমি বলে দাও যে, সত্য এসেছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে। অতএব যে চায় তাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক। আর যে চায় তাতে অবিশ্বাস করুক। আমরা সীমালংঘনকারীদের জন্য আগুন প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (কাহ্ফ ১৮/২৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أُوتِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ، ‘আমাকে সারগর্ভ কথা বলার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে’।[5]
কুতুবে সিত্তাহর অন্যতম প্রসিদ্ধ ইমাম আবুদাঊদ (২০২-২৭৫ হি.) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর বর্ণিত ৫ লক্ষ হাদীছ বাছাই করেছি। তার মধ্য থেকে ৪ হাযার ৮ শত হাদীছ জমা করেছি। তবে আমি মনে করি, একজন মানুষের জন্য দ্বীনের ব্যাপারে চারটি হাদীছই যথেষ্ঠ। এক- ‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল’। দুই- ‘সুন্দর ইসলাম হ’ল অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করা’। তিন- ‘মুমিন কখনো প্রকৃত মুমিন হ’তে পারে না, যতক্ষণ না সে অপরের জন্য ঐ বস্ত্ত পসন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পসন্দ করে’। চার- ‘হালাল স্পষ্ট ও হারাম স্পষ্ট’ (মুক্বাদ্দামা আবুদাঊদ)।
(৫) শিক্ষক প্রয়োজনে বারবার বলে বিষয়বস্ত্তকে সহজ করে বুঝিয়ে দিবেন :
এজন্য রাসূল (ছাঃ) কোন কোন বিষয় ৩ বার করে বলতেন (বুখারী হা/৯৫)। তিনি বলেন,إِنَّ اللهَ لَمْ يَبْعَثْنِي مُعَنِّتًا وَلاَ مُتَعَنِّتًا، وَلَكِنْ بَعَثَنِي مُعَلِّمًا مُيَسِّرًا- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কাউকে কষ্টে ফেলতে বা কারও পদস্খলনকামীরূপে আমাকে প্রেরণ করেননি; বরং তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন শিক্ষা দানকারী ও সহজকারীরূপে’।[6]
(৬) শিক্ষক সর্বদা শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করবেন :
শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে সর্বদা আরও অধিক অগ্রগতির জন্য উৎসাহিত করবেন। কোনভাবেই তাকে হতাশ করবেন না বা মারধর করবেন না। সে অপমান বোধ করে, এমন কোন কথা বা আচরণ তার সাথে করবেন না। বরং প্রশ্নের মাধ্যমে তার মেধাকে জাগিয়ে তুলবেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন ছাহাবীদের বললেন, তোমরা আমাকে এমন একটি বৃক্ষ সম্পর্কে বল, যার পাতা পড়ে না এবং অমুক অমুকগুলি পতিত হয় না। যা সর্বদা খাদ্য প্রদান করে?’ তখন কেউ কোন জবাব দিল না। ইবনু ওমর বলেন, আমার মনে হ’ল, এটি খেজুর গাছ হবে। কিন্তু আমি দেখলাম যে, আবুবকর ও ওমর কিছুই বলছেন না। ফলে আমি কিছু বলাটা পসন্দনীয় মনে করলাম না। যখন কেউ কিছু বললেন না, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, সেটি হ’ল খেজুর গাছ’। অতঃপর যখন আমরা উঠলাম, তখন আমি পিতা ওমরকে বললাম, আববা! আল্লাহর কসম! আমার মনে একথাই উদয় হয়েছিল যে, ওটা খেজুর গাছ। কিন্তু আপনারা কিছু বলছেন না দেখে আমি কিছু বলাটা ঠিক মনে করিনি। তখন পিতা ওমর বললেন, ‘তোমার বলাটা আমার নিকটে অধিক প্রিয় ছিল অমুক অমুক বস্ত্তর চাইতে’।[7]
এর মধ্যে কতগুলি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। যেমন (ক) শিক্ষক মাঝে-মধ্যে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করবেন। (খ) শিক্ষার্থী উত্তর না দিলে তাকে বকা-ঝকা করবেন না। বরং উৎসাহিত করবেন। (গ) শিক্ষার্থীর জানা থাকলে সঠিক উত্তর দানে লজ্জা করবে না।
(৭) শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করা : শিক্ষার্থীকে সর্বদা বৈধ প্রতিযোগিতার কাজে উৎসাহিত করতে হবে। কেননা যেকোন নেকীর কাজে প্রতিযোগিতা করা মুস্তাহাব। যার বিনিময়ে জান্নাত লাভ হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,سابِقُوآ إِلى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُها كَعَرْضِ السَّمآءِ وَالْأَرْضِ، ‘তোমরা প্রতিযোগিতা কর তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে। যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার ন্যায়’ (হাদীদ ৫৭/২১)। রাসূল (ছাঃ) বদর যুদ্ধের শুরুতে সারিবদ্ধ ছাহাবীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, قُوْمُوا إلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ، ‘তোমরা এগিয়ে চলো জান্নাতের পানে, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যাপ্ত’।[8] রাসূল (ছাঃ)-এর এই আহবান মুসলমানদের দেহ-মনে ঈমানী বিদ্যুতের চমক এনে দিল।[9] তখন জান্নাত পাগল মুমিন মৃত্যুকে পায়ে দলে শতগুণ শক্তি নিয়ে সম্মুখে আগুয়ান হ’ল ও তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এমন সময় জনৈক আনছার ছাহাবী ওমায়ের বিন হোমাম ‘বাখ বাখ’ (بَخْ بَخْ) ‘বেশ বেশ’ বলে উঠলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে এ কথার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি জান্নাতবাসী হ’তে চাই’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে সুসংবাদ দিয়ে বললেন,فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا ‘নিশ্চয়ই তুমি তার অধিবাসী’। একথা শুনে তিনি থলি হ’তে কিছু খেজুর বের করে খেতে লাগলেন। কিন্তু দ্রুত তিনি বলে উঠলেন,لَئِنْ أَنَا حَيِّيْتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِيْ هَذِهِ إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيْلَةٌ، ‘যদি আমি এই খেজুরগুলি খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তবে সেটাতো দীর্ঘ জীবন হয়ে যাবে’ বলেই সমস্ত খেজুর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ও বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন’।[10]
উপরোক্ত ঘটনায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বা সাথীদের উৎসাহিত করার প্রমাণ রয়েছে।
(৮) শিক্ষার্থীদের বুঝের তারতম্য বিচার করে শিক্ষা দান করা :
শিক্ষার্থীদের সামনে এমন কোন বিষয়ের অবতারণা করা ঠিক নয়, যা তারা বুঝবে না। যেমন মানুষকে বানরের বংশধর প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞানের নামে ডারউইনের কথিত ‘বিবর্তনবাদে’র নাস্তিক্যবাদী উদ্ভট দর্শন উপস্থাপন করা। অমনিভাবে কোটি কোটি বছর পূর্বে ‘বিগ ব্যাং’ তথা মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টিজগৎ আপনা-আপনি অস্তিত্ব লাভ করেছে এবং এগুলিকে আল্লাহ সৃষ্টি করেননি বলে মিথ্যা প্রমাণ পেশ করা। একারণে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন,مَا أَنْتَ بِمُحَدِّثٍ قَوْمًا حَدِيثًا لاَ تَبْلُغُهُ عُقُولُهُمْ إِلاَّ كَانَ لِبَعْضِهِمْ فِتْنَةٌ- ‘তুমি কাউকে এমন কথা বলো না, যা তাদের বোধগম্য হবে না। ফলে এতে তারা ফিৎনায় পড়ে যাবে’ (মুসলিম হা/৫)। যেমন ফেৎনায় পড়েছেন যুগে যুগে অসংখ্য দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীবৃন্দ। দিনের আলোয় হারিকেন নিয়ে রাস্তা অনুসন্ধানীর ন্যায় তারা জীবনভর মিথ্যা মরীচিকার পিছনে ছুটে চলেছেন (নূর ২৪/৩৯)। ফলে এরা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছেন, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করছেন। তরুণ শিক্ষার্থীদের কচি মনে এইসব ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অবোধ্য দর্শন উপস্থাপন করা হ’তে আদর্শ শিক্ষকদের দূরে থাকা কর্তব্য।
(৯) কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া : এর দ্বারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহববত বৃদ্ধি পায় ও সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। রাসূল (ছাঃ) তাঁর খাদেম অসুস্থ ইহূদী বালককে তার বাড়ীতে দেখতে যান। অতঃপর যখন দেখেন যে, বালকটি মৃত্যুপথযাত্রী, তখন তিনি তাকে বলেন, তুমি ইসলাম কবুল কর। তখন বালকটি তার পিতার দিকে তাকাল। ইহূদী পিতা বলল,أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ، ‘তুমি আবুল কাসেমের কথা মেনে নাও! অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْقَذَهُ بِي مِنَ النَّارِ- ‘আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি আমার মাধ্যমে ছেলেটিকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচালেন’।[11] এর মধ্যে রোগীর সেবা ও তাকে জান্নাত লাভের সঠিক পথ প্রদর্শনের দলীল রয়েছে। অতএব শিক্ষকের কর্তব্য হবে তার স্নেহের শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া এবং সদুপদেশ দেওয়া।
(১০) সকল শিক্ষার্থীর সাথে ন্যায়বিচার করা :
শিক্ষার্থীদের সবাইকে সমান নযরে দেখা এবং সর্বদা তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা (মুসলিম হা/১৮২৭; মিশকাত হা/৩৬৯০)। বিশেষ করে পরীক্ষায় কারু প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা এবং ফলাফল দানের সময় যার যা পাওনা, তা সঠিকভাবে প্রদান করা। কারণ এর পরিণতিতে তিনি আল্লাহর কঠিন পাকড়াওয়ের শিকার হবেন (নিসা ৪/৮৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ، عَنْ يَّمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ، الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِي حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا- ‘ন্যায়বিচারকগণ (ক্বিয়ামতের দিন) মহিমান্বিত ও দয়ালু আল্লাহর ডানপাশে নূরের মিম্বর সমূহে বসবেন। আর আল্লাহর উভয় হাতই ডান হাত। তারা হ’লেন ঐসব ব্যক্তি, যারা তাদের শাসনে, পরিবারে এবং তাদের অধিনস্তদের মধ্যে ন্যায়বিচার করে’ (মুসলিম হা/১৮২৭; মিশকাত হা/৩৬৯০)।
(১১) শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বদা স্নেহশীল ও কল্যাণকামী থাকা :
শিক্ষক সর্বদা শিক্ষার্থীর প্রতি স্নেহশীল ও কল্যাণকামী থাকবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَّمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ شَرَفَ كَبِيرِنَا- ‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ছোটকে সেণহ করে না ও বড়দের মর্যাদা বুঝে না’।[12] হাদীছটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের জন্য একটি চিরন্তন দিগদর্শন। আর এই দিগদর্শন কেবল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে নয়, বরং একই আদর্শের অনুসারীদের মধ্যে যদি কারু সাথে কোনদিন সাক্ষাৎ না-ও হয়, তথাপি তাদের পরস্পরের মহববতের সম্পর্ক ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। যেমন রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যে একদল লোককে ভালবাসে, কিন্তু তাদের সাথে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি? জবাবে তিনি বললেন,الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ- ‘মানুষ তার সঙ্গেই থাকবে, যাকে সে ভালবাসে’।[13] অতএব শিক্ষক-শিক্ষার্থী সশরীরে হোক বা অদৃশ্যভাবে হোক, অ্যাকচুয়াল হোক বা ভার্চুয়াল হোক, দেশে হোক বা বিদেশে হোক, বিশুদ্ধ দ্বীনের আদর্শিক অনুসারী যিনিই হবেন, তিনিই ক্বিয়ামতের দিন পরস্পরে একত্রে থাকবেন। আর আল্লাহ যাকে কবুল করেন, জিব্রীলের মাধ্যমে জগদ্বাসীর অন্তরে তিনি সেটি নিক্ষেপ করে দেন । যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিব্রীলকে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস। ...অতঃপর তিনি আল্লাহর হুকুমে আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। অতএব তোমরাও তাকে ভালবাসো। তখন আসমানবাসীরা তাকে ভালবাসতে থাকেন। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন তিনি জিব্রীলকে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ঘৃণা করি, অতএব তুমিও তাকে ঘৃণা কর। ...অতঃপর তিনি আল্লাহর হুকুমে আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ঘৃণা করেন। অতএব তোমরাও তাকে ঘৃণা কর। তখন আসমানবাসীরা তাকে ঘৃণা করতে থাকেন। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে ঘৃণার পাত্র করে দেওয়া হয়’।[14]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,الأَرْوَاحُ جُنُودٌ مُّجَنَّدَةٌ، فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ، وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ- ‘রূহ সমূহ (আত্মার জগতে) ভাল-মন্দ মিলিত সেনাবাহিনীর ন্যায় একত্রিত ছিল। সেখানে যে সব রূহ যাদের পসন্দ করত, দুনিয়াতেও তাদের সাথে পরিচিত হ’লে তারা পরস্পরে বন্ধু হবে। আর সেখানে যে সব রূহ যাদের অপসন্দ করত, দুনিয়াতেও তারা তাদের সাথে পরিচিত হ’লে তাদের সাথে মতভেদ করবে’।[15] অর্থাৎ আখেরাতের ন্যায় দুনিয়াতেও তারা ‘হিযবুল্লাহ’ (আল্লাহর বাহিনী) ও ‘হিযবুশ শায়ত্বান’ (শয়তানের বাহিনী) হবে (মুজাদালাহ ৫৭/১৯, ২২; মিরক্বাত)।
হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,وَجَبَتْ مَحَبَّتي لِلْمُتَحَابِّيْنَ فِيَّ، وَالْمُتَجَالِسيْنَ فِيَّ، وَالْمُتَزَاوِرِيْنَ فِيَّ، وَالْمُتَبَاذِلِيْنَ فِيَّ- ‘আমার ভালোবাসা ওয়াজিব হয়ে যায় তাদের জন্য, যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে, পরস্পরে বৈঠক করে, পরস্পরে সাক্ষাৎ করে এবং পরস্পরে ব্যয় করে’।[16]
অতএব শিক্ষকের কর্তব্য হবে তার শিক্ষার্থীকে আল্লাহর প্রিয় বান্দারূপে গড়ে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বদা স্নেহশীল থাকা।
শিক্ষার্থীর কর্তব্য :
শিক্ষার্থী মূলতঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করবেন। ফলে সে জীবনের যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, সর্বদা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কাজ করবে। কোন অবস্থাতেই সে দ্বীনকে হাতছাড়া করবে না এবং আখেরাত বিক্রি করে দুনিয়া হাছিল করবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ- ‘যে ব্যক্তি ইল্ম শিক্ষার জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সহজ করে দেন’।[17] এখানে ‘ইল্ম’ অর্থ ‘দ্বীনী ইল্ম’ (মিরক্বাত)। যা জান্নাতের পথ দেখায়।
আর কুরআন-সুন্নাহর ইল্ম হ’ল ‘আল্লাহর অহি’। যা সত্য ও শাশ্বত এবং যার মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ রয়েছে (বাক্বারাহ ২/২০১)। পক্ষান্তরে দুনিয়াবী ইল্ম দুনিয়ার তাকীদে মুমিন-কাফের সবাই শেখে। আর উক্ত ইলম হ’ল ধারণা নির্ভর। যেখানে শাশ্বত সত্য বলে কিছু নেই (ইউনুস ১০/৩৬)। যেমন একই বিজ্ঞান একেক সময় একেক তথ্য প্রকাশ করছে। ফলে আজকে যা সত্য, কাল তা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। যেমন সূর্য ঘোরে, না পৃথিবী ঘোরে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এক সময় ছিল বিস্তর মতভেদ। খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রীক বিজ্ঞানী পিথাগোরাস (খৃ. পূ. ৫৭০-৪৯৫) বলেন, পৃথিবী ঘোরে, সূর্য স্থির। তার প্রায় সাতশ’ বছর পর মিসরীয় বিজ্ঞানী টলেমী (৯০-১৬৮ খৃ.) বলেন, সূর্য ঘোরে পৃথিবী স্থির। তার প্রায় চৌদ্দশ’ বছর পর পোলিশ বিজ্ঞানী কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩ খৃ.) বলেন, টলেমীর ধারণা ভুল। বরং পৃথিবীই ঘোরে, সূর্য স্থির। কিন্তু এখন সবাই বলছেন, আকাশে সবকিছুই ঘোরে। অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাযার বছর পূর্বে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে কুরআন ঘোষণা করেছে,كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ- ‘নভোমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই সন্তরণশীল’ (আম্বিয়া ২১/৩৩; ইয়াসীন ৩৬/৪০)।
কারণ মনুষ্য বিজ্ঞানের উৎস হ’ল ‘অনুমিতি’। যা যেকোন সময় ভুল প্রমাণিত হ’তে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন, Science gives us but a partial knowledge of reality ‘বিজ্ঞান আমাদেরকে কেবল আংশিক সত্যের সন্ধান দেয়’।[18]
মানুষ যতবড় জ্ঞানীই হৌক সে তার ভবিষ্যৎ জানেনা। এক মিনিট পরে তার জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছে, সে বলতে পারে না। পৃথিবীতে বসবাস ও তা পরিচালনার জন্য যাকে যতটুকু জ্ঞান দেওয়ার প্রয়োজন, আল্লাহ তাকে ততটুকু দান করেছেন এবং প্রকৃত জ্ঞানের ভান্ডার নিজ হাতে রেখেছেন। সীমিত জ্ঞানের মানুষ চিরকাল নিজেদের মধ্যে হৈ চৈ করেছে স্রেফ আন্দাজ-অনুমানের উপর ভিত্তি করে। এমনকি শত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও বিজ্ঞান মানুষকে এযাবৎ কেবল ‘আংশিক সত্য’ (Partial truth) উপহার দিতে পেরেছে, ‘চূড়ান্ত সত্য’ (Absolute truth) নয়।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ...দ্বীনী ইলম শিক্ষার্থীর জন্য ফেরেশতারা তাদের ডানা সমূহ বিছিয়ে দেয় এবং আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সবাই উক্ত শিক্ষার্থীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যেকার মাছ পর্যন্ত। আর আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর যেমন পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা নক্ষত্ররাজির উপর। নিশ্চয়ই আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিছ। আর নবীগণ কোন দীনার ও দিরহাম রেখে যান না কেবল ইল্ম ব্যতীত। যে ব্যক্তি সেটি গ্রহণ করল, সে পূর্ণমাত্রায় সেটি পেয়ে গেল’।[19]
তিনি আরও বলেন,فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسَ الْخَيْرَ- ‘আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা, যেমন তোমাদের উপর আমার মর্যাদা। অতঃপর তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর
ফেরেশতামন্ডলী এবং নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে বসবাসকারী এমনকি গর্তের পিঁপড়া ও পানির মাছ পর্যন্ত দো‘আ করে মানুষকে উত্তম শিক্ষা দানকারী ব্যক্তির উপর’।[20] অত্র হাদীছে জাহিল আবেদের উপরে জ্ঞানী আলেমের উচ্চ মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। সাথে সাথে তারা যাতে নিজেদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকেন, সে বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
মানুষের জ্ঞানের দরজা খুলে দেওয়া বা না দেওয়াটা আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে তা বেশী দেন। কাউকে কম দেন। কাউকে যৎসামান্য দেন। এজন্য সর্বদা দো‘আ করতে বলা হয়েছে,رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও!’ (ত্বোয়াহা ২০/১১৪)। অতঃপর শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলি স্মরণ রাখবে।-
(১) ইখলাছ : প্রথমেই শিক্ষার্থীকে দ্বীনী ইল্ম শিখার নিয়তে একনিষ্ঠ হ’তে হবে। কেননা লক্ষ্যে একনিষ্ঠ ও অবিচল থাকা ব্যতীত দুনিয়াতে কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন,أَلاَ لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ، ‘মনে রেখ, একনিষ্ঠ আনুগত্য স্রেফ আল্লাহরই প্রাপ্য’ (যুমার ৩৯/৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، ‘সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’।[21] অতএব দ্বীনী বা দুনিয়াবী যে ইলম হাছিল করুক না কেন, লক্ষ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে আল্লাহর চেহারা দর্শন। ভবিষ্যতে বড় কোন পেশাজীবী বা পদাধিকারী ব্যক্তি হ’লে সেখানেও যেন একই দ্বীনী লক্ষ্য থাকে।
(২) লেখাপড়ায় সর্বদা অগ্রবর্তী থাকার প্রচেষ্টা চালানো : কেননা ইসলাম হ’ল লেখাপড়ার দ্বীন। যার প্রথম অহি হ’ল ‘ইক্বরা’ ‘পড় তুমি তোমার প্রতিপালকের নামে’ (‘আলাক্ব ৯৬/১)। ঐ লেখাপড়া যা শিক্ষার্থীকে তার প্রতিপালকের সন্ধান দেয়। যিনি তাকে লেখাপড়ার মেধা, যোগ্যতা ও পরিবেশ দান করেছেন।
[1]. আহমাদ হা/১৭৪০; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ‘নাজাশীর দরবারে কুরায়েশ প্রতিনিধি দল’ অনুচ্ছেদ ১৫৮ পৃ.।
[2]. তিরমিযী হা/২৭০৬; আবুদাঊদ হা/৫২০৮; মিশকাত হা/৪৬৬০।
[3]. তিরমিযী হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/৪৬৫৩; ছহীহাহ হা/৮১৬।
[4]. বায়হাক্বী শো‘আব হা/৮৮১৬; মিশকাত হা/৪৬৭৬; ছহীহাহ হা/৮১৭।
[5]. আহমাদ হা/৭৩৯৭ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[6]. মুসলিম হা/১৪৭৮; মিশকাত হা/৩২৪৯ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[7]. বুখারী হা/৪৬৯৮; মুসলিম হা/২৮১১ রাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)।
[8]. মুসলিম হা/১৯০১; মিশকাত হা/৩৮১০ রাবী আনাস (রাঃ)।
[9]. দ্র. লেখক প্রণীত সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), ৩য় মুদ্রণ ‘যুদ্ধ শুরু’ অনুচ্ছেদ ২৯৭ পৃ.।
[10]. মুসলিম হা/১৯০১; মিশকাত হা/৩৮১০ ‘জিহাদ’ অধ্যায়, রাবী আনাস (রাঃ); সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৯৯ পৃ.।
[11]. আবুদাঊদ হা/৩০৯৫; বুখারী হা/১৩৫৬; মিশকাত হা/১৫৭৪।
[12]. তিরমিযী হা/১৯২০ রাবী আমর বিন শো‘আয়েব তাঁর পিতা ও দাদা হ’তে; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৪৪।
[13]. বুখারী হা/৬১৭০; মুসলিম হা/২৬৪০; মিশকাত হা/৫০০৮; মিরক্বাত।
[14]. মুসলিম হা/২৬৩৭; মিশকাত হা/৫০০৫ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায় ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ; বুখারী হা/৬০৪০ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[15]. বুখারী হা/৩৩৩৬; মিশকাত হা/৫০০৩ রাবী আয়েশা (রাঃ)।
[16]. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৫০৭; তিরমিযী হা/২৩৯০; মিশকাত হা/৫০১১ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়-২৫ ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১ রাবী মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ); আলবানী, ছহীহুত তারগীব হা/২৫৮১।
[17]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[18]. মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, মহাসত্যের সন্ধানে (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী ৫ম প্রকাশ ১৪১৯ হি./১৯৯৮ খৃ.) ৬১ পৃ.; দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ‘কুরআনের মু‘জেযা হওয়ার প্রমাণ সমূহ’ অধ্যায় ৭৯১ পৃ.।
[19]. তিরমিযী হা/২৬৮২; মিশকাত হা/২১২ রাবী আবুদ্দারদা (রাঃ)।
[20]. তিরমিযী হা/২৬৮৫; মিশকাত হা/২১৩ রাবী আবু উমামা বাহেলী (রাঃ)।
[21]. বুখারী হা/১; মুসলিম হা/১৯০৭; মিশকাত হা/১ রাবী ওমর (রাঃ)।
(৩) ইল্ম ও আলেমের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা : কারণ (ক) দ্বীনী ইল্ম হ’ল নবীদের ইল্ম। তাঁরা কোন দীনার ও দিরহাম রেখে যাননি ইল্ম ব্যতীত’।[1] উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য এটাই বড় মর্যাদা যে, বিংশ শতাব্দীতে এসেও তারা তাদের নবীর ওয়ারিছ হ’তে পারে।
(খ) আল্লাহ তাঁর একত্ববাদের সাক্ষী হিসাবে নিজেকে, ফেরেশতাদেরকে ও ন্যায়নিষ্ঠ আলেমদেরকে একত্রে বর্ণনা করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,شَهِدَ اللهُ أَنَّهُ لَآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ وَالْمَلَآئِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَآئِمًا بِالْقِسْطِ، لَآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ- ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর ফেরেশতামন্ডলী ও ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (আলে ইমরান ৩/১৮)। অতএব ন্যায়নিষ্ঠ আলেমের জন্য এটিই সবচাইতে বড় মর্যাদা যে, আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের সাথে তাঁর একত্ববাদের সাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করেছেন।
(গ) রাসূল (ছাঃ) কোন ব্যক্তিকে অন্যের সম্পদের ব্যাপারে ঈর্ষা পরায়ণ হ’তে উৎসাহ দেননি দু’টি নে‘মত ব্যতীত। ইল্ম অন্বেষণ ও তদনুযায়ী আমল এবং ঐ ব্যবসায়ী যিনি তার মাল-সম্পদ ইসলামের জন্য উৎসর্গ করেন। যেমন তিনি বলেন,لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ : رَجُلٍ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الْحَقِّ، وَرَجُلٍ آتَاهُ اللهُ الْحِكْمَةَ فَهُوَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا- ‘হিংসা নেই দু’জন ব্যক্তির স্বভাব ব্যতীত। এক- ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। অতঃপর সে তা হক-এর পথে উৎসর্গ করে। দুই- ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ প্রজ্ঞা দিয়েছেন। আর সে তা দিয়ে ভাল-মন্দ ফয়ছালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়’।[2] এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ- ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়’।[3]
(ঘ) ইল্ম হ’ল জ্যোতি। যা দিয়ে সে রাস্তা দেখে। আর আল্লাহর অনুগত বান্দারাই কেবল এই জ্যোতি লাভ করেন। সে জানতে পারে কিভাবে সে তার প্রতিপালকের দাসত্ব করবে এবং কিভাবে সে অন্যদের সাথে সদাচরণ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا، لاَ يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلاَّ هَالِكٌ، ‘আমি তোমাদের নিকট উজ্জ্বল দ্বীন রেখে যাচ্ছি। যার রাত্রি হ’ল দিবসের ন্যায়। যে ব্যক্তি সেখান থেকে বিচ্যুৎ হবে, সে ধ্বংস হবে’।[4] আল্লাহ বলেন, يَهْدِي اللهُ لِنُورِهِ مَنْ يَّشَآءُ، ‘আল্লাহ যাকে চান স্বীয় জ্যোতির দিকে পরিচালিত করেন’ (নূর ২৪/৩৫)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,
شَكَوْتُ إلَى وَكِيعٍ سُوءَ حِفْظِي + فَأَوْصَانِى إلَى تَرْكِ الْمَعَاصي
فَإنَّ العِلْمَ نُورٌ مِنْ إِلَهِ + وَنُوْرُ اللهُ لاَ يُعْطَى لِعَاصِي-
‘আমি আমার (উস্তাদ) অকী‘-এর নিকট আমার দুর্বল স্মৃতির অভিযোগ পেশ করলাম। + তখন তিনি আমাকে গোনাহ পরিত্যাগের উপদেশ দিলেন’। ‘কেননা ইল্ম হ’ল আল্লাহর পক্ষ হ’তে একটি নূর। + আর আল্লাহর নূর কোন গোনাহগারকে প্রদান করা হয় না’।[5]
(ঙ) ইলমের অধিকারী ব্যক্তি মানুষকে দ্বীনী ও দুনিয়াবী কল্যাণের পথ দেখায়। যেমন একটি প্রসিদ্ধ হাদীছ রয়েছে যে, বনু ইস্রাঈলের জনৈক ব্যক্তি ৯৯ জন মানুষকে খুন করে। তখন সে অনুতপ্ত হয়ে জনৈক আবেদ-এর নিকট জিজ্ঞেস করল, তার জন্য কোন তওবা আছে কি? আবেদ তার মহা পাপ সমূহের কথা শুনে বলল, তোমার কোন তওবা নেই। তখন সে আবেদকে হত্যা করল এবং ১০০ পূর্ণ করল। অতঃপর সে একজন আলেমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তার জন্য কোন তওবা আছে কি? আলেম তখন তাকে একটি সৎকর্মশীল জনপদের সন্ধান দিয়ে বললেন, তুমি ঐ এলাকায় যাও। অতঃপর সে উক্ত এলাকার উদ্দেশ্যে বের হ’ল। ইতিমধ্যে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়ে গেল এবং মৃত্যুকালে সে তার সিনাকে ঐ গ্রামের দিকে বাড়িয়ে দিল। অতঃপর রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতা পরস্পরে ঝগড়া করতে লাগল কে তার রূহ নিয়ে যাবে। এসময় আল্লাহ বললেন, তোমরা দুই জনপদের মধ্যে দূরত্ব মেপে দেখ। তখন দেখা গেল যে, মাপে তাকে ঐ গ্রামের দিকে কিছুটা নিকটবর্তী পাওয়া গেল। ফলে তাকে ক্ষমা করা হ’ল’।[6] উক্ত হাদীছে জাহিল আবেদের উপরে জ্ঞানী আলেমের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।
(চ) দ্বীনী ইলমের শিক্ষার্থী সর্বদা আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয় এবং আখেরাতে সে আল্লাহর নিকট উচ্চ মর্যাদা লাভ করে। যেমন আল্লাহ বলেন,يَرْفَعِ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ، ‘(যদি তোমরা আদেশ পালন কর, তাহ’লে) তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ উচ্চ মর্যাদা দান করবেন’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)। অতএব আল্লাহর আদেশ পালনকারী শিক্ষার্থীকে যথার্থ দ্বীনী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা অর্জন করতে হবে।
(৪) দৃষ্টি অবনত রাখা : শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হবে, নিজের দৃষ্টিকে অবনত রাখা। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর’। আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে’ (নূর ২৪/৩০-৩১)। কারণ দৃষ্টি হ’ল হৃদয়ের খোলা জানালা স্বরূপ। এ পথেই ইবলীসের বিষাক্ত তীর অলক্ষ্যে মানব হৃদয়ে প্রবেশ করে। ফলে সে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যেনার অংশ লাভ করে’।[7] আল্লাহ বলেন, إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولاً- ‘নিশ্চয়ই কান, চোখ ও হৃদয় আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হবে’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৩৬)। রাসূল (ছাঃ) প্রথম দৃষ্টিপাতকে অনুমোদন করেছেন, দ্বিতীয় দৃষ্টিপাতকে নয়’।[8] অতএব বারবার তাকালে ও মন্দ চিন্তা করলে সে যেনার দায়ে দায়ী হবে। কারণ দৃষ্টি হ’ল বাকীগুলির মূল। অতএব চোখ-কান প্রভৃতি দেহের খোলা জানালাগুলি শয়তান থেকে সাধ্যমত দূরে রাখতে হবে এবং ফেৎনার স্থান সমূহ হ’তে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, চোখ ও কান হ’ল আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নে‘মত। তাকে যাবতীয় হারাম থেকে বিরত রেখে এই নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। নইলে আল্লাহ যেকোন সময় এই অমূল্য নে‘মত ছিনিয়ে নিতে পারেন।
(৫) আল্লাহর ইবাদত সমূহের প্রতি মনোযোগী থাকা : আল্লাহ বলেন, ‘সফলকাম মুমিন তারাই, যারা ছালাতে মনোযোগী থাকে’ (মুমিনূন ২৩/২)। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তিন ধরনের মুছল্লীকে প্রশংসা করেছেন : খাশে‘ঊন (মনোযোগী), ইউহাফিযূন (ছালাতের সময় ও নিয়মাবলীর হেফাযতকারী) এবং ‘দায়েমূন’ (নিয়মিত)।[9] আর তিন ধরনের মুছল্লীকে নিন্দা করেছেন : ‘সাহূন’ (উদাসীন), ‘ইউরাঊন’ (লোক দেখানো) ও ‘কুসালা’ (অলস)।[10] তাই শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই আল্লাহর প্রশংসিত মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত হ’তে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন ইল্ম অন্বেষণ তাদেরকে ইবাদত পালন থেকে বিরত না রাখে। বরং আযানের সাথে সাথে ছালাতের জন্য উঠে পড়তে হবে।
(৬) প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ শিক্ষা করা : খানাপিনা, লেখাপড়া, টয়লেট-গোসল ও অন্যান্য সকল শিষ্টাচারমূলক বিষয়ে প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ মুখস্থ করা ও তা নিয়মিত পালন করা। আল্লাহ বলেন, اُدْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ، ‘তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’ (মুমিন ৪০/৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ، ‘দো‘আ হ’ল ইবাদত’।[11] তিনি আরও বলেন,لاَ يَرُدُّ القَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ، ‘আল্লাহর ফায়ছালাকে কোন বস্ত্ত পরিবর্তন করতে পারে না দো‘আ ব্যতীত’।[12] অর্থাৎ আল্লাহ স্বীয় ফায়ছালার পরিবর্তন করেন যখন বান্দা তাঁর নিকটে দো‘আ করে। এজন্য ছহীহ হাদীছে বর্ণিত বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দো‘আ সমূহ মুখস্থ করতে হবে। কেননা দো‘আর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং তার হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। যেমন আল্লাহ বলেন,أَلاَ بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ- ‘মনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই কেবল হৃদয় প্রশান্ত হয়’ (রা‘দ ১৩/২৮)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, আমি আমার উস্তাদ ইবনু তায়মিয়াহকে বলতে শুনেছি,الذِّكْرُ لِلْقَلْبِ مِثْلُ الْمَاءِ لِلسَّمَكِ، فَكَيْفَ يَكُونُ حَالَ السَّمَكِ إذَا فَارَقَ الْمَاءُ؟ ‘হৃদয়ের জন্য আল্লাহর স্মরণ, মাছের জন্য পানির ন্যায়। অতএব মাছের অবস্থা কেমন হয়, যখন সে পানি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়?’[13]
(৭) মন্দ সাথী হ’তে দূরে থাকা :
অসৎসঙ্গী গ্রহণ করা যাবে না। তাই এ বিষয়ে ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,اَلرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُّخَالِلُ- ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতি অনুযায়ী চলে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ্য রাখে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে’।[14] তিনি আরও বলেন,لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ- ‘তুমি মুমিন ব্যতীত কারো সাথী হয়ো না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার ব্যতীত কেউ ভক্ষণ না করে’।[15] আল্লাহ বলেন, اَلْأَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍم بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلاَّ الْمُتَّقِينَ- ‘বন্ধুরা সেদিন পরস্পরে শত্রু হবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত’ (যুখরুফ-মাক্কী ৪৩/৬৭)। অতএব মন্দ সাথীদের সাহচর্য পরিহার করতে হবে এবং আল্লাহভীরু সাথীদেরকেই বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে, যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে আহবান করে তাঁর চেহারার কামনায় এবং তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়। আর তুমি ঐ ব্যক্তির আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি। আর সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে গেছে’ (কাহ্ফ-মাক্কী ১৮/২৮)।
(৮) সময়ের সদ্ব্যবহার করা : শিক্ষার্থীকে তার পাঠ পরিকল্পনা ও ক্লাসের সময়সূচীর সীমিত সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সর্বাবস্থায় সময়ানুবর্তীতা বজায় রাখতে হবে। সব কাজ সময়মতো করার প্রতি তাকীদ দিয়ে আল্লাহ সময়ের কসম করে বলেন, وَالْعَصْرِ- إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ- ‘কালের শপথ’। ‘নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে’ (আছর ১০৩/১-২)। এর মধ্যে সময়ের মূল্য বর্ণিত হয়েছে। অতএব সময়মতো লেখাপড়া, সময়মতো খেলাধূলা, সময়মতো ঘুমানো ও সময়মতো আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। এছাড়া পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব সাধ্যপক্ষে পালন করতে হবে। সময়ের অপচয় করা যাবে না। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,وَلاَ تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَالِكَ غَدًا- إِلاَّ أَنْ يَّشَآءَ اللهُ، ‘আর তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ওটা আমি আগামীকাল করব’। ‘যদি আল্লাহ চান’ বলা ব্যতিরেকে’ (কাহ্ফ ১৮/২৩-২৪)। সময়ের সদ্ব্যবহার বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنْ قَامَتِ السَّاعَةُ وَبِيَدِ أَحَدِكُمْ فَسِيلَةٌ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لاَّ يَقُومَ حَتَّى يَغْرِسَهَا فَلْيَفْعَلْ- ‘যদি ক্বিয়ামত শুরু হয়ে যায়, আর তোমার হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহ’লে তুমি সেটি লাগিয়ে দাও’।[16] এজন্যই বলা হয়, TIME AND TIDE WAIT FOR NONE ‘সময় ও স্রোত কারু জন্য অপেক্ষা করেনা’। সময়কে আদৌ অনর্থক কাজে ব্যয় করা যাবে না। কেননা মানুষকে তার প্রতিটি কর্মের হিসাব আল্লাহর নিকট দিতে হবে। যেমন তিনি বলেন,فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهُ- وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهُ- ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে’। ‘আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে’ (যিলযাল ৯৯/৭-৮)। অতএব রাত জেগে খেলা করা বা খেলা দেখা বা অনর্থক কাজে সময় ব্যয় করা যাবে না।
(১০) অধ্যবসায়ী হওয়া : অধ্যবসায় ব্যতীত জীবনে বড় হওয়া যায় না।
আল্লাহ বলেন, وَأَنْ لَّيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلاَّ مَا سَعَى- ‘আর মানুষ কিছুই পায় না তার চেষ্টা ব্যতীত’ (নজম ৫৩/৩৯)। ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হি.) শিক্ষার্থীদের প্রতি উপদেশ দিয়ে বলেন,
أَخي لَن تَنالَ العِلمَ إِلاَّ بِسِتَّةٍ + سَأُنبيكَ عَن تَفصيلِها بِبَيانِ
ذَكاءٌ وَحِرصٌ وَاِجتِهادٌ وَبُلغَةٌ + وَصُحبَةُ أُستاذٍ وَطولُ زَمانِ
‘হে আমার ভাই! তুমি কখনোই ইল্ম শিখতে পারবে না ৬টি
বস্ত্ত অর্জন করা ব্যতীত + সত্বর আমি তোমাকে সেটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করব’। ‘মেধা, আগ্রহ, অধ্যবসায়, সামর্থ্য + এবং উস্তাদের সাহচর্য ও দীর্ঘ সময়’।[17]
(১১) চরিত্রবান হওয়া ও অন্যের সাথে সদ্ব্যবহার করা : পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও সাথী-বন্ধু সবার সাথে উত্তম আচরণ করা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا شَيْءٌ أَثْقَلُ فِي مِيزَانِ المُؤْمِنِ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ خُلُقٍ حَسَنٍ، ‘ক্বিয়ামতের দিন মীযানের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী বস্ত্ত হবে তার সচ্চরিত্রতা’।[18] তিনি বলেন,إِتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ وَإِذَا عَمِلْتَ سَيِّئَةً فَاعْمَلْ حَسَنَةً تَمْحُهَا- ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ্কে ভয় কর এবং মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার কর। আর যখনই কোন পাপকর্ম করে ফেল তখনই কোন সৎকর্ম কর যাতে পাপটি মিটে যায়’।[19]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, (১) আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয়, যে মানুষের সবচেয়ে বেশী উপকার করে। (২) আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নেক আমল হ’ল কোন মুসলিমকে আনন্দিত করা অথবা তার কোন বিপদ, কষ্ট বা উৎকণ্ঠা দূর করা, অথবা তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া অথবা তার ক্ষুধা দূর করা। তিনি বলেন, (৩) আমার কোন ভাইয়ের সাহায্যের জন্য তার সাথে হেঁটে যাওয়া আমার নিকট এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) এক মাস ই‘তেকাফ করার চেয়েও প্রিয়। (৪) যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। নিজের ক্রোধ কার্যকর করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তা দমন করবে, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার হৃদয়কে সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দিবেন। (৫) যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাথে গিয়ে তার কোন প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে, ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে যেদিন পুলছিরাতের উপর সকলের পা পিছলে যাবে, সেদিন আল্লাহ তার পা দৃঢ় রাখবেন। তিনি বলেন, (৬) সিরকা যেমন মধুকে নষ্ট করে দেয়, মন্দ আচরণ তেমনি মানুষের সৎকর্ম সমূহ বিনষ্ট করে দেয়’।[20]
উপরোক্ত হাদীছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ব্যক্তি ও সমাজের ছোট-খাট কল্যাণ বিষয়েও মুমিনকে সজাগ থাকতে হবে। অনেকের জ্ঞান আছে, কিন্তু হুঁশ নেই। এদের অসতর্কতার জন্যই পরিবারে, সমাজে ও সংগঠনে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয় ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(১৩) কুরআন ও সুন্নাহকে চূড়ান্ত সত্যের মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করা : কুরআন ও সুন্নাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত উৎস এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী মানদন্ড। আল্লাহ বলেন,اَلْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلاَ تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ- ‘সত্য সেটাই যা তোমার পালনকর্তার নিকট থেকে আসে। অতএব তুমি অবশ্যই সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’।[21] তিনি বলেন,لاَ يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلاَ مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مَّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ- ‘সম্মুখ থেকে বা পিছন থেকে এতে কোন মিথ্যা প্রবেশ করে না। এটি মহা প্রজ্ঞাময় ও মহা প্রশংসিত সত্তার পক্ষ হ’তে অবতীর্ণ’ (ফুছছিলাত ৪১/৪২)। আল্লাহ বলেন,وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى- إِنْ هُوَ إِلاَّ وَحْيٌ يُّوحَى- ‘রাসূল তার ইচ্ছামত কিছু বলেন না। সেটি কেবল তাই, যা তার নিকটে ‘অহি’ করা হয়’ (নাজ্ম-মাক্কী ৫৩/৩-৪)।
কনিষ্ঠ ও লেখক ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সকল কথা লিখতেন। এতে কুরায়েশ নেতারা তাকে বলেন, তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর সব কথা লিখছ। অথচ তিনি সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি সর্বাবস্থায় কথা বলে থাকেন। তখন আমি লেখা বন্ধ করি এবং বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট পেশ করি। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি লেখ।-وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا خَرَجَ مِنِّى إِلاَّ حَقٌّ- ‘যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, আমার যবান থেকে কখনোই হক ব্যতীত বের হয় না’।[22] তিনি বলেন,فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمُحَمَّدٌ فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ- ‘যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ হ’লেন মানুষের মধ্যে (সত্য ও মিথ্যার) পার্থক্যকারী’।[23]
অতএব দুনিয়ার সবকিছু মিথ্যা হ’তে পারে, কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী ও হেদায়াত কখনোই মিথ্যা হবে না। কবি বলেন,
اصل دين آمد كلام الله معظّم داشتن + پس حديث مصطفے پرجان مسلم داشتن
‘প্রকৃত দ্বীন হ’ল আল্লাহর কালামকে আসীন করা সর্বোচ্চ মর্যাদায় + অতঃপর রাসূলের হাদীছকে ধারণ করা হৃদয়ের মণিকোঠায়’।
ہوتے ہوئے مصطفے كى گفتار + مت ديكھ كسى كا قول و كِردار
‘রাসূলের বাণী থাকতে তুমি + কারু কথা ও কর্মের প্রতি করো না দৃকপাত’।
প্রত্যেকেই বলেন, আমরা কুরআন-সুন্নাহ মানি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সীমিত সংখ্যক মুমিন ব্যতীত অধিকাংশ তা মানে না। কবির ভাষায়, كُلٌّ يَّدَّعِي وَصْلاً لِلَيلَي+ ولَيلي لا تُقِرُّ لهم بِذاكا ‘প্রত্যেকেই লাইলী প্রেমের দাবী করে + অথচ লাইলী তাদের
কাউকে স্বীকার করে না’। তারা বলেন,
عِبَاراتُنا شَتَّى وحُسنُكَ واحدٌ + وكُلٌّ إلى ذالك الْجَمال يُشِيرُ-
‘আমাদের ভাষা সমূহ পৃথক, কিন্তু (হে নবী) তোমার সৌন্দর্য একই + আর প্রত্যেকে পথ প্রদর্শন করে ঐ সৌন্দর্যের দিকেই’।
অথচ আল্লাহ বলেন,وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ ‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে। অথচ তারা শিরক করে’ (ইউসুফ ১২/১০৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ، وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ، ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত’।[24]
তিনি বলেন,إِنَّ الْإِسْلاَمَ بَدَأَ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَأَ فَطُوبَى لِلْغُرَبَآءِ، قِيلَ : مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : الَّذِينَ يُصْلِحُونَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ- ‘ইসলাম নিঃসঙ্গভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। সত্বর সেই অবস্থায় ফিরে আসবে। অতএব সুসংবাদ হ’ল সেই অল্পসংখ্যক লোকদের জন্য। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, যখন মানুষ নষ্ট হয়ে যায়, তখন তাদেরকে যারা সংস্কার করে’।[25] তিনি আরও বলেন,لاَ تَزَالُ طَآئِفَةٌ مِّنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ، لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَالِكَ- ‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’।[26]
অতএব শিক্ষার্থীকে যেকোন মূল্যে কুরআন ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে থাকতে হবে এবং এ দুইয়ের আলোকে সমাজ সংস্কারক দলের সাথী হয়ে থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই মন্দ দলের সাথী হবে না।
অভিভাবকদের কর্তব্য :
শিক্ষার্থী গড়ার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হ’ল অভিভাবকদের। তারা সন্তানদের বিশুদ্ধ দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত না করলে আল্লাহর নিকট কৈফিয়তের সম্মুখীন হবেন। সন্তানেরা সেদিন তাদের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট দ্বিগুণ শাস্তির দাবী জানাবে ও কঠিনভাবে অভিসম্পাৎ করবে (আহযাব ৩৩/৬৭-৬৮)। এজন্য সর্বাগ্রে অভিভাবকের বাড়ীতে দ্বীনী পরিবেশ থাকতে হবে। সেই সাথে শিক্ষার্থীর জন্য কল্যাণের দো‘আ করতে হবে। অভিভাবকরা নিম্নের বিষয়গুলির প্রতি খেয়াল রাখুন।-
(১)শিক্ষার্থীর জন্য খালেছ দো‘আ করা : অভিভাবকদের প্রাথমিক দায়িত্ব হ’ল শিক্ষার্থীদের জন্য আল্লাহর নিকট কল্যাণের দো‘আ করা। যেমন একদিন রাসূল (ছাঃ) টয়লেট থেকে বেরিয়ে দেখলেন যে, তাঁর জন্য ওযূর পানি প্রস্ত্তত। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কে রাখল? তাঁকে জানানো হ’ল যে, ইবনু আববাস রেখেছে। তখন তিনি তার জন্য দো‘আ করে বললেন, اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِى الدِّينِ وَعَلِّمْهُ التَّأْوِيْلَ- ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের বুঝ দাও এবং তাকে তাৎপর্য অনুধাবন শিক্ষা দাও’। ওমর (রাঃ) একদিন ইবনু আববাসকে কাছে ডাকেন। অতঃপর বলেন, আমি দেখেছি যে, রাসূল (ছাঃ) একদিন তোমাকে কাছে ডাকেন ও তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দো‘আ করেন ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের বুঝ দাও এবং সঠিক ব্যাখ্যাদান শিক্ষা দাও’। ইবনু সা‘দ-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন,اللَّهُمَّ عَلِّمْهُ الْحِكْمَةَ وَتَأْوِيلَ الْكِتَابِ- ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে প্রজ্ঞা দাও এবং তাকে তাৎপর্য অনুধাবন শিক্ষা দাও’।[27] এতে বুঝা যায় যে, অভিভাবকগণ তাদের স্নেহাস্পদ ও সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আল্লাহর নিকট খালেছ অন্তরে দো‘আ করবেন।
(২) শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় গড়ে তোলা : এর মূল দায়িত্ব হ’ল অভিভাবকদের। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ، ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীনী ইল্ম শিক্ষা করা ফরয’।[28] এজন্য সর্বাগ্রে তাকে ছালাতে অভ্যস্ত করতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তোমার পরিবারকে ছালাতের আদেশ দাও এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক। ...’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مُرُوْا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ اَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِيْنَ وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ- ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে ছালাত পড়ার নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বৎসরে উপনীত হয় এবং ছালাতের জন্য প্রহার কর, যখন তারা দশ বৎসরে উপনীত হয়। আর তাদের শয্যাগুলি তখন পৃথক করে দাও’।[29]
(৩) শিক্ষার্থীকে প্রথমে কুরআন ও হাদীছ শিক্ষাদান : সম্ভব হ’লে পুরা কুরআন অথবা তার কিছু অংশ এবং কিছু হাদীছ মুখস্থ করানো অভিভাবকদের জন্য প্রাথমিক কর্তব্য। যা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ চলার পথের জ্যোতি হিসাবে কাজ করবে। ইমাম সুয়ূত্বী বলেন, বাল্যকালে কুরআন শিক্ষা দেওয়া ইসলামের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তাদের হৃদয়গুলি কুরআনের নূরে আলোকিত থাকে।[30]
(৪) শিক্ষার্থীর মেধা বুঝে সেদিকে পরিচালিত করা :
ইমাম বুখারী (রহঃ) ৭ বছর বয়সে কুরআনের হাফেয হন। অতঃপর ১০ বছর বা তার পূর্বেই হাদীছ মুখস্থ শুরু করেন। এসময় তিনি ফিক্বহ পড়তে উদ্বুদ্ধ হন। কিন্তু হাদীছের প্রতি তাঁর মেধা ও আগ্রহ বুঝতে পেরে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান তাঁকে বলেন,اِذهَبْ وَاشْتَغِلْ بِعِلْمِ الْحَدِيثِ- ‘তুমি যাও এবং ইলমে হাদীছে মনোনিবেশ কর’। পরবর্তীতে ইমাম বুখারী ‘আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীছ’ বা ‘হাদীছ শাস্ত্রের আমীর’ বলে অভিহিত হন। এজন্য বর্তমান যুগে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রসিদ্ধ ক্বারীদের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ও হিফযুল হাদীছের মাশ্ক্ব শুনানো যায়।
(৫) শিক্ষার্থীকে যোগ্য শিক্ষক ও উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখা : যেখানে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিশুদ্ধ শিক্ষা ও তার বাস্তব অনুশীলনের পরিবেশ রয়েছে, তেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীকে পড়ানো ও সেই পরিবেশে রাখা অতীব যরূরী।
(৬) শিক্ষার্থীদের সালাফে ছালেহীনের শিক্ষণীয় কাহিনী শুনানো : (ক) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, বিগত দিনের বড় বড় বিদ্বানদের ইল্ম শিক্ষার কাহিনী শুনানো আমার নিকটে অধিক প্রিয় ফিক্বহ শাস্ত্র শিখানোর চাইতে। কেননা আল্লাহ নবীদের কাহিনী সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তাদের কাহিনী সমূহের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় রয়েছে’ (ইউসুফ ১২/১১১)। (খ) আহমাদ বিন নযর হেলালী বলেন, ‘আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, যখন তিনি আমাকে নিয়ে সুফিয়ান বিন উয়ায়নার মজলিসে প্রবেশ করেন, তখন সেখানকার শিক্ষার্থীরা অল্প বয়স্ক দেখে আমাকের হীন নযরে দেখে। তখন উস্তাদ সুফিয়ান তাদের বলেন, তোমরা প্রথমে এরূপ ছোটই ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। অতএব- أَوْسِعُوا لِلشَّيْخِ الصَّغِيرِ! ‘তোমরা এই ছোট শায়েখের জন্য মজলিস প্রশস্ত করে দাও!’
(গ) ইমাম ইবনুল জাওযী শৈশবকালে তার লেখাপড়ার কষ্ট বর্ণনা করে বলেন, মা আমাকে কিছু রুটি দিতেন। যা নিয়ে আমি হাদীছ শিখতে যেতাম। অতঃপর ক্ষুধা পেলে বাগদাদের নদীর তীরে গিয়ে শুকনা রুটি পানিতে ভিজিয়ে এক লোকমা খেতাম। অতঃপর শক্তি সঞ্চয় করে পুনরায় ইল্ম শিখতে বসতাম। আল্লাহ আমাদের অভিভাবকদের যথাযোগ্য হক আদায়ের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
[1]. আবুদাঊদ হা/৩৬৪১; মিশকাত হা/২১২ ‘ইলম’ অধ্যায়।
[2]. বুখারী হা/৭৩; মুসলিম হা/৮১৬; মিশকাত হা/২০২ রাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)।
[3]. বুখারী হা/৫০২৭; মিশকাত হা/২১০৯ রাবী ওছমান (রাঃ)।
[4]. ইবনু মাজাহ হা/৪৩ রাবী ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ)।
[5]. হাশিয়াতুল বাজরীমী ‘আলাল খত্বীব’ ২/৩৪৯; ই‘আনাতুত ত্বালেবীন ২/১৯০ পৃ.।
[6]. বুখারী হা/৩৪৭০; মুসলিম হা/২৭৬৬; মিশকাত হা/২৩২৭।
[7]. বুখারী হা/৬২৪৩; মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬।
[8]. আবুদাঊদ হা/২১৪৯; মিশকাত হা/৩১১০ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[9]. মুমিনূন ২৩/২, ৯; মা‘আরেজ ৭০/২৩।
[10]. মাঊন ১০৭/৫-৬; নিসা ৪/১৪২।
[11]. আবুদাঊদ হা/১৪৭৯ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২২৩০ রাবী নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ)।
[12]. তিরমিযী হা/২১৩৯; মিশকাত হা/২২৩৩ রাবী সালমান ফরেসী (রাঃ); ছহীহাহ হা/১৫৪।
[13]. ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হি.),আল-ওয়াবেলুছ ছাইয়িব মিনাল কালিমিত ত্বাইয়িব ৪২ পৃ.।
[14]. আবুদাঊদ হা/৪৮৩৩ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৫০১৯ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[15]. আবুদাঊদ হা/৪৮৩২ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৫০১৮ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়-২৫ ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১, রাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)।
[16]. আহমাদ হা/১৩০০৪ রাবী আনাস বিন মালেক (রাঃ); ছহীহাহ হা/৯।
[17]. ইবনু খাল্লিকান, অফিইয়াতুল আ‘ইয়ান ৭/৩৫৬ পৃ.।
[18]. তিরমিযী হা/২০০২ রাবী আবুদ্দারদা (রাঃ); ছহীহুত তারগীব হা/২৬৪১।
[19]. আহমাদ হা/২১৩৯২; তিরমিযী হা/১৯৮৭; মিশকাত হা/৫০৮৩, সনদ হাসান, রাবী আবু যার গিফারী (রাঃ); ছহীহুল জামে‘ হা/৯৭।
[20].ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৬০২৬; ছহীহাহ হা/৯০৬।
[21]. বাক্বারাহ ২/১৪৭; আলে ইমরান ৩/৬০।
[22]. আহমাদ হা/৬৫১০; হাকেম হা/৩৫৯; দারেমী হা/৪৮৪।
[23]. বুখারী হা/৭২৮১; মিশকাত হা/১৪৪ রাবী জাবের (রাঃ); ইবনুল আছীর।
[24]. মুসলিম হা/৮৬৭; মিশকাত হা/১৪১ রাবী জাবের (রাঃ)।
[25]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুছ ছগীর হা/২৯০, রাবী সাহল বিন সা‘দ (রাঃ); ছহীহাহ হা/১২৭৩।
[26]. মুসলিম হা/১৯২০; আবুদাঊদ হা/৪২৫২; মিশকাত হা/৫৪০৬ ‘ফিতান’ অধ্যায়, রাবী ছওবান (রাঃ)।
[27]. বুখারী হা/১৪৩; ফাৎহুল বারী; হাকেম হা/৬২৮০; মিশকাত হা/৬১৩৯।
[28]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯১৩।
[29]. আবুদাঊদ হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৫৭২ রাবী ‘আমর বিন শু‘আয়েব (রাঃ)।
[30]. দ্র. লেখক প্রণীত ও হাফাবা প্রকাশিত ‘আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার’ বই, চার ইমাম সহ ৭টি দৃষ্টান্ত (২য় প্রকাশ ২০২২)।